ফাগুনের আগুন ঝরা স্বাধীনতার মাস!!!

ফাগুনের আগুন ঝরা স্বাধীনতার মাস!!!

সরদার মোঃ শাহীন

 

সময়টা এখন চৈত্র মাসের ঠিক মাঝামাঝি। বসন্ত যায় যায় করছে। বসন্ত যদিও নির্মল হাওয়ায় দোলানো একটা মিষ্টি রোমান্টিক আবহের মাস; কিন্তু চৈত্রের খরতাপে এসে সেই আবহ কিছুটা হলেও ম্লান হয়ে যায় এই বাংলায়। তাই মানুষ চৈত্রকে বিদায়ে উন্মুখ হয়ে ওঠে। মেতে ওঠে বৈশাখকে বরণ করার উৎসবী আমেজে। নববর্ষকে আলিঙ্গন করার এক উষ্ণ উম্মাদনায়। ভুলে যায় বসন্তের আগমনী বার্তা নিয়ে আসা ফাগুনের প্রথম দিনটির কথা। হলুদের রঙে চারদিক রাঙিয়ে দেবার কথা।

আমার সেই দুষ্ট বন্ধুটি চারদিক রাঙিয়ে দিতে না পারলেও ভোলেনি প্রথম দিনটির কথা। ভোলেনি ফাগুনের হলুদ রঙ নিয়ে দুষ্টামি করতেও। সেদিনের আড্ডায় মন খারাপের ভান ধরে এক কোণে চুপচাপ বসে আছে সে। এটা যে ভান; বোঝার উপায় নেই। ওর ভান ধরা ভাব বোঝা বড় কঠিন। মনটা আসলেই খারাপ, নাকি খারাপ দেখানোর চেষ্টা, নিজে থেকে না বললে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া মুশকিল। ফাগুনের আগুন ঝরা হাসি ওর মুখে না দেখতে পেয়ে জানতে চাইলাম, “মুখটা এমন পেঁচার মত করে রেখেছিস কেন? সমস্যা কি তোর?”

সমস্যা আর কিছু না, দোস্ত। মধ্যবিত্তের সমস্যা। বলে, একটু দম নিল যেন। পরক্ষণেই মুখটা আরো কিছুটা গম্ভীর করে বললো, “মধ্যবিত্তের তো আজকাল খেয়েপড়ে বেঁচে থাকাটাই বড় সমস্যা। এর মধ্যেই ফাগুন এলো। বড় ঝামেলার ফাগুন। ফাগুন তো ক্যালেন্ডারের দাস। বছর ঘুরে সময় মত ঠিক ঠিক আসবেই। দেশের বাজারের মূল্যস্ফীতি দেখে তো আর আসবে না। আসবে না বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দাভাব বিবেচনা করেও।

আমরা সবাই ওর কথায় মনোযোগী হবার চেষ্টা করলাম। ব্যপারটা ও বুঝতে পেরে আরো একটু ভাব নিয়ে বললো, “কিন্তু ঘরের পোলাপাইন তো এসব বোঝে না। ওরা বোঝে আনন্দ। বোঝে বিনোদন। ফাগুনীয় বিনোদন। ফাগুন আসবে, বসন্ত আসবে; আর হলুদ রঙের পোশাক গায়ে চড়িয়ে ওরা হাঁটবে না, হাসবে না; তা কি হয়! ওসব কিনে দিতে দিতে আমার তো রফা দফা হয়ে গেছে দোস্ত। কী যে দিন পড়লো! আগে তো এসব ছিল না। এখন অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে, ফাগুনেও ঈদের মত কেনাকাটা। হলুদ পোশাক কেনার হিরিক। ফাগুনের এসব কেনাকাটা এখন মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে নেই। মধ্যবিত্ত চাইলেই এখন আর হলুদ রঙের ছোঁয়া পাবে না। বরং দুদিন পানি কম খেয়ে পহেলা ফাগুনে হলুদ পিশু করে যদি ছোঁয়া পায়!!”

ফাজিলটা সব সময়ই এমন করে মজা করে। তবে একেবারে মন্দ বলেনি। ফাগুন এখন কেনাকাটার মাস। উৎসব আর ইমোশনের মাস। ফাগুন তথা বসন্ত নিয়ে আমাদের সবার মাঝে অনেক ইমোশন থাকলেও স্বাধীনতার মাস নিয়ে ইমোশন নেই বললেই চলে। অথচ এই বসন্তেই আমরা ভাষার স্বাধীনতা পেয়েছি। পেয়েছি রাষ্ট্রের স্বাধীনতাও। কিন্তু নতুন প্রজন্ম দিনকে দিন এসবের ইতিহাস ভুলতে বসেছে। নতুন করে জানার আগ্রহ তো নেইই। যারা কিছুটা জানতো, তারাও আজকাল এসবে আর আগ্রহ পায় না। আগ্রহ দেখায়ও না। এমনকি এটাও জানে না, মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীনতা যুদ্ধের পার্থক্য কি?

প্রিয় পাঠক, আপনি জানেন তো? মূলত স্বাধীনতা যুদ্ধ কথাটির ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর। বিশেষ করে হত্যাকান্ডের প্রধান বেনেফিসিয়ারী তার আমলে অতীব কুমতলব নিয়ে অত্যন্ত কুকৌশলে শব্দটি চালু করে দিয়ে যান। স্বাধীনতা তথা মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম নিশানা চিরতরে মুছে ফেলার জন্য কুকৌশলটি নেন তিনি। বলা যায় বাঙালীকে স্বাধীনতা নিয়ে, স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে বিভ্রান্তিতে ফেলে ধোঁকা দেবার প্রথম প্রচেষ্টা।

মুক্তিযুদ্ধের পাশে অনেকটা সমার্থক শব্দ হিসেবে স্বাধীনতা যুদ্ধ শব্দটিকে এনে জাতিকে গোলকধাঁধায় ফেলা হয়েছে। দু’টো যুদ্ধকে এক করে ফেলা হয়েছে। অথচ দু’টো যুদ্ধ শুরু হয়েছে দুই সময়ে। প্রথমটি ৫২তে, ....

 

পূর্বে প্রকাশিত